স্বদেশ ডেস্ক:
চাকরিতে যোগদানের আশায় বাড়ি থেকে ঢাকায় গিয়ে লাশ হয়ে স্বজনদের কাছে ফিরতে হলো পাঁচবিবি উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম নন্দইলের বাসিন্দা সাগর ইসলামকে। প্রতারক চক্রের সদস্যরা তাকে হত্যা করে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার একটি ব্রিজের নিচে ফেলে যায়। গতকাল শনিবার সকালে লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হলে শোকের মাতম পড়ে যায় সাগর ইসলামের বাড়িতে। পুলিশ বলছে, ইতোমধ্যেই এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ঢাকার শ্রীপুর থেকে তিনজন ও পাঁচবিবি থেকে একজনকে আটক করা হয়েছে। এদিকে ছেলের লাশ দেখে মা আলেয়া বেগমের বুকফাটা আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে এলাকার পরিবেশ।
নিহত সাগরের বাবা আবদুর রশিদ জানান, পাঁচবিবি উপজেলার উচনা গ্রামের মৃত মজিবর রহমানের ছেলে আবদুর রউফের মাধ্যমে একই উপজেলার হরেন্দা গ্রামের আফাজ উদ্দিনের ছেলে গোলাম রসুল মাস্টার, মোহাম্মদ মাস্টারের ছেলে আবদুল আলিম ও জয়পুরহাট জননী লাইব্রেরির রবির সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। চার মাস আগে তারা আমার ছেলে সাগরকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ৯ লাখ টাকা চুক্তি করে। ছেলের চাকরির আশায় তাদের ৭ লাখ টাকা দেওয়া হয়। বাকি টাকা নিয়োগপত্র পাওয়ার পর দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।
এরই মধ্যে গোলাম রসুল, আবদুল আলীম ও রবি মোবাইল ফোনে রশিদকে জানায়- তার ছেলের নিয়োগপত্র হয়েছে। বাকি ২ লাখ টাকা নিয়ে ঢাকায় এলে তার ছেলেকে চাকরির নিয়োগপত্র দেওয়া হবে। তাদের কথায় গত ২৩ মার্চ রশিদ ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় যান।
পরদিন রাজধানীর কালশী এলাকায় রশিদের হাতে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা ‘মহা অধিদপ্তরসহ অঙ্গ বাহিনী সংস্থাসমূহের সাংগঠনিক কাঠামোভুক্ত বিজ্ঞপ্তি স্মারক নং-২৩.১৭০০০০.০১.০৪.০৩৮.১৯.১৬২২’ অনুযায়ী সুপারিশক্রমে অফিস সহায়ক পদে ২৫ মার্চ যোগদানের জন্য একটি নিয়োগপত্র দেওয়া হয়।
নিয়োগপত্র হাতে পেয়ে বাকি ২ লাখ টাকা ওই ব্যক্তিদের হাতে তুলে দিয়ে ছেলেকে রেখে বাড়ি ফিরে যান রশিদ। বাড়ি ফেরার পর ছেলের ফোনে যোগাযোগ করলে সেটি বন্ধ পান। আলিমকে বিষয়টি জানানো হলে তিনি বলেন, ‘আপনার ছেলে ট্রেনিংয়ে আছে, এ জন্য ফোন বন্ধ রয়েছে।’ রশিদ আরও বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশের মাধ্যমে জানতে পারি আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। এর পর দালাল আলিমের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।’
নিহত সাগরের ছোট ভাই আকাশ জানান, আমার বড় ভাইয়ের ছোটবেলা থেকেই সেনাবাহিনী কিংবা বিজিবিতে চাকরি করার খুব শখ ছিল। কিন্তু সেটি পূরণ হয়নি। সর্বশেষ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে চাকরি দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়েও তাকে চাকরি তো দূরের কথা, হত্যা করল দালালরা। আমি আমার ভাইয়ের খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।
এ ব্যাপারে স্থানীয় পাঁচবিবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পলাশ চন্দ্র দেব জানান, সোনারগাঁও থানা পুলিশের ইনফরমেশন অনুযায়ী সাগরের পরিচয় শনাক্ত করে তার বাবাকে ২ মার্চ লাশ গ্রহণের জন্য সোনারগাঁও থানায় পাঠানো হয়েছিল। সর্বশেষ তিনি গতকাল সকালে লাশ নিয়ে তার নিজ গ্রামে চলে আসেন। এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে পাঁচবিবি উপজেলার উচনা গ্রাম থেকে অভিযুক্ত আবদুর রউফ নামে একজনকে আটক করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
এ বিষয়ে সোনারগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তফিজুল ইসলাম বলেন, ২৫ মার্চ লাশ উদ্ধারের পরই একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। নিহতের পকেটে একটি সিমকার্ডের সূত্র ধরে পাঁচবিবি থানায় বিষয়টি অবগত করা হয়। এর পরই ২ মার্চ ঢাকার শ্রীপুর থেকে তিনজনকে আটক করা হয়। এটি একটি বড় চক্র বলেও ওসি জানান।